আপরাধ ঢাকতে পাল্টা সংবাদ সম্মেলন ‘হানি ট্র্যাপে’র সদস্য তিশার

মে ২১, ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক

যশোরে নিজের আপনার ঢাকতে এবার পাল্টা সংবাদ সম্মেলন করেছে ‘হানি ট্র্যাপে’র সদস্য নাজনীন নাহার তিশা।
বাঁধনের পরিবারের সংবাদ সম্মেলনকে মিথ্যা ভিত্তিহীন দাবি করে শহরের বারান্দিপাড়া মাঠপাড়া এলাকার বাসিন্দা তিশা মঙ্গলবার দুপুরে প্রেসক্লাব যশোরে এক সংবাদ সম্মেলন করেন যুবক নাহিদ হাসান বাঁধন ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে। এদিকে সংবাদ সম্মেলন করতে এসে গণমাধ্যমকর্মীদের প্রশ্নের কোন সৎউত্তর ও ওই যুবকের বিরুদ্ধে তেমন কোন তথ্য প্রমান দিতে পারেনি। ফলে এক প্রকার মুখ নিচে করে চলে যেতে বাধ্য হয় তিশা।
সংবাদ সম্মেলনে ওই নারী অভিযোগ করে বলেন, যুবক নাহিদ হাসান বাঁধন তাকে বিয়ের প্রলোভন দেখে তার সাথে প্রতারণা করেছে। তাছাড়া তার পরিবারের সদস্যরা আমার বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলনে যে মিথ্যা অভিযোগ তুলে ধরেছেন তার সম্পূর্ণ মিথ্যা ভিত্তিহীন। তারা প্রেসক্লাব যশোরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে মিথ্যা ভিত্তিহীন গল্প কাহিনী তৈরি করে সংবাদ সম্মেলনের তীব্র প্রতিবাদ জানান। ও মানহানির অভিযোগ তোলেন।
নাজনীন নাহার তার বক্তব্যে জানান, ১৬ বছর বয়সে (২০২২ সালে) স্কুলে পড়াকালীন নাহিদ হাসান বাঁধন তাকে প্রেমের প্রস্তাব দিতে থাকে এবং একপর্যায়ে জোর করে চুম্বনের ছবি তুলে তা ফেসবুতে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে তাকে ব্ল্যাকমেইল শুরু করে। পরবর্তীতে তাকে জেস গার্ডেন পার্ক সংলগ্ন একটি বাড়িতে নিয়ে তাকে বিয়ের প্রলোভন দেখায় শারীরিক সম্পর্ক তৈরি করে। বাঁধন তাকে বিবাহের মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে প্রায় তিন বছর ধরে বিভিন্ন স্থানে স্ত্রীর পরিচয় করিয়ে দিতে থাকে।
নাজনীন দাবি করেন, পরে জানতে পারেন বাঁধন ইতিমধ্যে চারটি বিবাহ করেছেন। বিষয়টি পরিবারকে জানালে দুই পক্ষের মধ্যে শালিশি সভা হয়, কিন্তু বাঁধনের পরিবার ৫ লক্ষ টাকা যৌতুকের দাবি করে বিবাহে অস্বীকৃতি জানায়। এ সময় নাজনীনকে মারধরেরও অভিযোগ ওঠে। গত ১০ মে তিনি যশোর কোতয়ালী থানায় বাঁধনের বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা দায়ের করলে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে।
প্রতিক্রিয়া ও হুমকির অভিযোগ
নাজনীন অভিযোগ করেন, বাঁধনের বোনের স্বামী বাদল মাহমুদ (খালধার রোড) তাকে মামলা প্রত্যাহার ও জীবননাশের হুমকি দিচ্ছেন। এছাড়া, গত ১৩ মে বাঁধনের পরিবার প্রেসক্লাবে মিথ্যা তথ্য দিয়ে সংবাদ সম্মেলন করে তার চরিত্র হননের চেষ্টা করেছে।
এরআগে ‘হানি ট্র্যাপের খপ্পরে পড়ে’ নাহিদ হাসান বাঁধন নামের এক যুবক কারাগারে রয়েছেন বলে জানিয়ে তার পরিবার গত মঙ্গলবার ১৩ মে দুপুরে প্রেসক্লাব যশোরে সংবাদ সম্মেলন করেন।
সংবাদ সম্মেলনে ওই যুবকের মায়ের দাবি করেন, ব্ল্যাকমেলের শিকার হয়ে চাহিদা অনুযায়ী অর্থ না দেওয়ায় ধর্ষণ মামলায় তাকে ফাসানো হয়েছে তাকে।
লিখিত বক্তব্যে নাছিমা খানম জানান, তার একমাত্র ছেলে নাহিদ হাসান বাঁধন কাজীপাড়া বিমান অফিস মোড়ে যশোর কনসালটেন্সি ফার্মে চাকরি করেন। হঠাৎ করেই গত ১০ মে তার অফিস থেকে কোতোয়ালি থানা পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। পরে থানায় গিয়ে জানতে পারেন, বারান্দি মাঠপাড়া এলাকার জাহিদ হোসেন নান্নুর মেয়ে নাজনীন নাহার তিশা তার বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা করেছেন।
নাছিমা খানম দাবি করেন, কলেজে লেখাপড়াকালীন তার ছেলে বাধনের সঙ্গে তিশার পরিচয় হয়। তিশা হানি ট্র্যাপ চক্রের সদস্য। পরিচয়ের সূত্র ধরে তিশা কৌশলে বাঁধনকে ফাঁসিয়ে অবৈধ সম্পর্কে লিপ্ত হন এবং তার ছবি ও ভিডিও ধারণ করেন। তিন বছর ধরে সেই ভিডিও ও ছবি দিয়ে তাকে ব্ল্যাকমেল করে আসছেন। গত তিন বছরে তিশা বাঁধনের কাছ থেকে তিন লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। বিকাশের মাধ্যমে এই টাকা পাঠানোর প্রমাণও রয়েছে।
তিনি আরও দাবি করেন, ওই মেয়ের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে তার ছেলে যোগাযোগ বন্ধ করে দিলে একইভাবে ব্ল্যাকমেল করে পাঁচ লাখ টাকা দাবি করেন। টাকা দিতে রাজি না হওয়ায় হানি ট্র্যাপ গ্রুপের সদস্য ইকরামুলসহ কয়েকজনকে দিয়ে বাঁধনকে তুলে নিয়ে মারধর করেন। পরে তিনটি সাদা স্ট্যাম্পে সই করিয়ে নেন। এরপরও টাকা দিতে রাজি না হওয়ায় বিয়ের জন্য চাপ দিতে থাকেন। একপর্যায়ে গত ১ মে রাত ১০ টার দিকে তিশা লোকজন নিয়ে বাড়িতে আসেন। এসময় বাঁধনকে না পেয়ে তার স্ত্রীকে মারধর করে ধর্ষণ মামলা দেওয়ার হুমকি দিয়ে চলে যান।
নাছিমা খানম জানান, এসব ঘটনায় কোতোয়ালি মডেল থানায় গত ২৮ মার্চ এবং ২ মে দুটি লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু পুলিশ এ বিষয়ে আইনগত পদক্ষেপ না নিয়ে উল্টো তিশার ষড়যন্ত্রমূলক ধর্ষণ মামলায় বাঁধনকে গ্রেফতার করেছে। তিনি এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে তার ছেলের মুক্তি এবং হানি ট্র্যাপ চক্রের সদস্যদের শাস্তি দাবি করেন।

মন্তব্য করুন